ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ফাঁসির মঞ্চে একই সঙ্গে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির।
বাংলাদেশে এই প্রথম দুজন সাবেক মন্ত্রীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (৬৬) ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (৬৭) দুজনেই ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিচারকে ত্রুটিপূর্ণ দাবি করেছে।
ফাঁসি কার্যকরের সময় নিয়ম অনুযায়ী সেখানে আইজি প্রিজন চৌধুরী ইফতেখার উদ্দিন, ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন, দুই ম্যাজিস্ট্রেট- খন্দকার মুশফিকুর রহমান ও তানভীর আহমেদ, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেলার নেছার আলম, সিনিয়রঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির উপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর আগে রাত ১২টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদকে তওবা পড়ানো হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করে। দুজনকে তওবা পাঠ করান কারা মসজিদের পেশ ইমাম মনির হোসেন।
এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে চারটি অ্যাম্বুলেন্স। তাদের লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরের উদ্দেশে যাবে অ্যাম্বুলেন্সটি।
ফাঁসি কার্যকরের আগে রাতে প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এবং পরে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মত সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে দুই পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। অবশ্য আগে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নাকচ করে দেন।
১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
পরে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আপিলের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন তিনি। সেটি গত ১৮ নভেম্বর খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ।
আর মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ।
চলতি বছরের ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মুজাহিদ, যেটি ১৮ নভেম্বর খারিজ করে ফাঁসি বহাল রাখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।