চারঘাট বাজারে গেলেই দেখা মিলবে টিনের ছাপরায় চা বিক্রি করছেন দুজন মধ্যবয়সী নারী। অভাবের তাড়না আর বেচে থাকার লড়ায়, একটা নতুন যুদ্ধ সব কিছু ছাপিয়ে নিজ প্রচেষ্টায় ঘুরে দাড়িয়েছেন তারা।রঙিলা এবং রেবেকা নামের এই দুই নারী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অন্যের দোকানে ও বাড়িতে কাজ করে নিজেই গড়ে তুলেছেন চায়ের দোকান। শহরের বড় বড় রেস্তরা বা কফি শপ গুলোতে নারীদের কাজ করতে দেখা গেলেও গ্রামে সেই সংখ্যাটা একেবারেই নগন্য তারপরেও কিছু নারী পাছে লোকে কি বলে সেই ভাবনাকে দুরে ঠেলে সামনে এগিয়েছেন । তাদের ই একজন রেবেকা বেগম স্বামীর মৃতূর পর অভাব ঘুচাতে দীর্ঘ ৮ বছর থেকে চা বিক্রি করছেন তিনি ।
প্রথম দিকে মানুষের নানা কুটু কথা শুনতে হলেও এখন সেসব কথা সয়ে গেছে এখন সবাই তার সুনাম করেন বলে জানাচ্ছিলেন রঙিলা । কথা বলতে বলতে জানালেন চা দোকানী হওয়ার গল্প । খুব ছোট বেলাই মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় রেবেকা বেগমের । কিন্তু বিয়ের ২ বছর পর হঠাত কাল বৈশাখী যেন আঘাত হানে তার ঘরে এক সন্তানকে রেখে স্বামী চলে যান পরপারে । স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের অভাব ঘুচাতে অন্যের দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি । এভাবেই চলতে থাকে দিন। কয়েক বছর পর ছোট বোন রেবেকা কে নিয়ে নিজেই চা বিক্রি শুরু করেন চারঘাট বাজারে ছোট্ট একটি টিনের ছাপড়া ঘর করে । শুরু হয় নতুন করে পথ চলা । চা বিক্রি করেই ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া এবং পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন দুই বোন। তবে অভাবের কারণে বেশি দুর পড়ালেখা করাতে পারেননি ছেলে মেয়েদের ।এখন দুর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক লোক আসেন এখানে চা খেতে । চা খেতে আসে লোকজন এবং তার প্রতিবেশীরাও জানালেন তার সংগ্রামী জীবনের গল্প ।
ভালই চলছিল দিন কিন্তু হটাৎ করেই করোনা এসে আবার উলট পালট করে দিয়েছে সব। তিন মাস বন্ধ থাকার পর লকডাউন সিথিল হওয়ায় চলাচল স্বাভাবিক হলেও আগের মত আর বেচা কেনা নেই। তাই অনেকটায় বিপাকে পড়েছেন তারা । করোনাকালে ১ বার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেওয়া ত্রাণ ছাড়া তেমন কোন সহায়তাও পাননি বলে জানালেন তারা। নিজ প্রচেষ্টায় ঘুরে দাড়ানো এই দুই নারীর ব্যাপারে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যন জনাব ফখরুল ইসলাম বলেন, তাদের ব্যপারে শুনেছি এবং তাদের একবার খাদ্য সহয়াতাও দেওয়া হয়েছে ভবিষ্যতে সরকারী বরাদ্দ আসলে আবারও তাদের সহায়তা করা হবে বলে জানালেন তিনি । এছাড়াও তিনি জানান করোনা শুরুর পর থেকেই চারঘাট উপজেলার দরিদ্র ও অনগ্রসর মানুষের দোড়গড়ায় সরকারী বরাদ্দসহ তার ব্যক্তিগত এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন তিনি ।
করেনাকালে শুধু সরকার নয় সরকারের পাশাপাশি রঙিলা-রেবেকাদের মত এমন হার না মানা নারীদেরকে সহযোগীতার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
লেখাঃ মৌসুমী দাস
কমিউনিটি মিডিয়া ফেলো বিএনএন আরসি ও রেডিও বড়াল ।