নিউজ ডেস্ক
জনতার বাণী,
নয়াদিল্লি: ললিত মোদী
বিতর্কে বিব্রত নরেন্দ্র
মোদির অস্বস্তি বাড়ালেন
বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা
লালকৃষ্ণ আদবানি।
প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে
শিষ্যের কাছে হার
হয়েছিল গুরুর। মোদি
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে দল
ও সরকারেও কার্যত অচ্ছুত
হয়ে গিয়েছেন তিনি।
নখদন্তহীন ‘মার্গদর্শকমণ্ডলী’র
সদস্য করে আদবানির
‘শোকগাথা’ প্রায় লিখেই
ফেলেছে বিজেপি। ৮৭
বছরের ‘লৌহপুরুষ’ তবু ফুরিয়ে
যেতে নারাজ।
গত এক বছর মোদির দাপট
তুঙ্গে থাকায় মুখ
খোলেননি।
কিন্তু ললিত-কাণ্ড তাতে
টোল ফেলতেই ফের গা-
ঝাড়া দিলেন তিনি।
আদবানি বললেন, দেশে
আবার জরুরি অবস্থা জারির
যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখছেন
তিনি।
এ মন্তব্যের লক্ষ্য যে নরেন্দ্র
মোদি, বিরোধীরা তো
বটেই, শাসক দলের বড় অংশও
তাতে একমত।
আগামী সপ্তাহে ভারতে
জরুরি অবস্থা জারির ৪০ বছর
পূর্ণ হচ্ছে (সাবেক
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা
গান্ধী জারি
করেছিলেন)।
কংগ্রেসকে বিপাকে
ফেলতে এই বর্ষপূর্তি
সাড়ম্বরেই পালন করার
প্রস্তুতি নিয়েছিল
বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু
একটি সংবাদমাধ্যমকে
দেওয়া সাক্ষাৎকারে
আদবানির বক্তব্য বিজেপি-
বিরোধীদের হাতেই অস্ত্র
তুলে দিয়েছে।
কী বলেছেন আদবানি?
বিজেপির বর্ষীয়ান
নেতার বক্তব্য, ‘সংবিধান ও
আইনের তোয়াক্কা না করে
যে সব শক্তি গণতন্ত্রকে
ধ্বংস করতে পারে, তাদেরই
এখন বাড়বাড়ন্ত।
রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এখন
আগের থেকে অনেক বেশি
পরিণত। কিন্তু তাতে কিছু
খামতি থাকায়, জরুরি
অবস্থা যে আবার ফিরে
আসবে না— এমনটা জোর
দিয়ে বলা যায় না।’
কেন্দ্রে বিজেপি শাসিত
সরকার থাকা সত্ত্বেও
আদবানি যেভাবে
রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে
প্রশ্ন তুলেছেন, তা যথেষ্ট
তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন
বিরোধীরা।
তাদের দাবি,
পরোক্ষভাবে নরেন্দ্র
মোদির নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন
তুলেছেন আদবানি।
বিজেপির একটি অংশের
আবার ব্যাখ্যা, মোদিকে
নিশানা করে
পরোক্ষভাবে নিজের
ঘনিষ্ঠ সুষমা স্বরাজের পিঠ
বাঁচাতেই সক্রিয় হয়েছেন
আদবানি।
এই সুযোগ কাজে লাগাতে
দেরি করেনি
বিরোধীরা। দিল্লির
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ
কেজরিবালের টিপ্পনি—
দিল্লিতে ইতিমধ্যেই জরুরি
অবস্থা প্রয়োগ করা শুরু
করেছেন মোদি।
আদবানিকে সমর্থন
জানিয়েছেন বিহারের
কট্টর মোদি-বিরোধী
নেতা নীতীশ কুমারও।
যাদের বিপাকে ফেলতে
জরুরি অবস্থা জারির
বিষয়টি প্রচারে তুলে
আনতে চেয়েছিল
বিজেপি, সেই কংগ্রেসও
এখন আদবানির মন্তব্যকে
শাসক দলের নেতৃত্বের লড়াই
হিসেবে ব্যাখ্যা করে
মজা লুটতে চাইছে।
বিজেপি অবশ্য প্রকাশ্যে
আদবানির মন্তব্যে বিষ
থাকার বিষয়টি অস্বীকারই
করছে। দলের মুখপাত্র এম জে
আকবরের দাবি, বর্ষীয়ান
নেতা দার্শনিক ভাবে
গোটা বিষয়টি বোঝাতে
চেয়েছেন। তিনি কোনো
ব্যক্তিবিশেষকে আক্রমণ
করেননি।
বিজেপি নেতারা অবশ্য
ঘরোয়াভাবে এটাও
স্বীকার করে নিচ্ছেন, দল ও
সরকারের কার্যপদ্ধতি
নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে
আদবানির। প্রবীণ ওই নেতা
তাই মোদিকে সরাসরি
নিশানা না-করে জরুরি
অবস্থার উল্লেখ করে
ঘুরিয়ে আক্রমণ
শানিয়েছেন। যাতে এক
ঢিলে অনেকগুলি পাখি
মারা সম্ভব হয়।
দলও স্বীকার করছে, সুষমা
প্রশ্নে গত এক বছরে এই
প্রথমবার চ্যালেঞ্জের মুখে
পড়েছে মোদির কর্তৃত্ব।
মানবিকতার দোহাই দিয়ে
ললিত মোদির পক্ষে
দাঁড়িয়েছিলেন সুষমা।
ঘটনাটির সঙ্গে সরাসরি
দুর্নীতির যোগ না
থাকলেও, অন্তত নৈতিকতা
নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদির
কর্তৃত্ব।
লোকসভা নির্বাচনের
আগে আদবানি-রাজনাথ-
সুষমারা না চাইলেও বিপুল
জনমতকে পাশে
পেয়েছিলেন মোদি। সেই
জনসমর্থনই এ যাবত শক্তি ছিল
মোদির। কিন্তু দিল্লির
নির্বাচন বুঝিয়েছে, সেই
জনমতেও ক্ষয় শুরু করেছে।
এরফলে সাংসদেরা
প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু
করেছেন। সাক্ষী
মহারাজদের মতো
নেতাদের বার বার বলেও
চুপ করানো যাচ্ছে না। দলে
মোদি-অমিত শাহের
কর্তৃত্বের রাশ দুর্বল হয়েছে
কি না, সে প্রশ্নও উঠে
গিয়েছে। যাতে ইন্ধন
দিয়েছেন আদবনি। অন্য
দিকে সুষমা বিতর্কে মুখে
কুলুপ এঁটেছেন মোদি।
বিরোধীদের মতে, এর
থেকেই বোঝা যাচ্ছে
সুষমার বিরুদ্ধে কোনো
পদক্ষেপ করার ক্ষমতা নেই
মোদির।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
